ভাগের মানুষ ২য় প্রদর্শনী
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে প্রদর্শিত হল থিয়েটার সাস্ট এর ২২ তম প্রযোজনা মঞ্চনাটক “ভাগের মানুষ”। এটি ছিল নাটকটির দ্বিতীয় প্রদর্শনী। নাটকটি রচনা করেছেন মান্নান হীরা, নির্দেশনা দিয়েছেন এ কে এম আতিকুর রহমান এবং পুনঃনির্দেশনা দিয়েছেন মোঃ মোরসালিন পলাশ। নাটকটির সহ নির্দেশনায় ছিলেন আব্দুল আজিজ রিয়াদ।
১৯৯৭ সালের ৮ই ডিসেম্বর “অভিষেক” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জন্ম নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্রুপ থিয়েটার “থিয়েটার সাস্ট” এবং সেই থেকে অদ্যাবধি গ্রুপ থিয়েটারের আদর্শে গতিশীল এই সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে গতিশীল রাখতে থিয়েটার সাস্ট এ পর্যন্ত ২৬টি নাটকের ৯৭টি সফল প্রদর্শনী করা সহ ৫টি নাট্য উৎসব সফলভাবে করতে পেরেছে। নাটকগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- “এ নিউ টেস্টামেন্ট অফ রোমিও এন্ড জুলিয়েট”, “মাধব মালঞ্চী কইন্যা” , “জলতরঙ্গ” ইত্যাদি । মৌলিক নাটকের মধ্যে আছে “ভাস্কর্য” , “আত্মকথন” ইত্যাদি ।
ভাগের মানুষের কাহিনী সংক্ষেপঃ ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ২-৩ বছর পর “লাহোর পাগলা গারদ” এর পাগলরা তখনও তাদের মনে বয়ে বেড়াচ্ছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় স্মৃতি। হিটলার, যোসেফ স্টালিন, উইন্সটন চার্চিল, মহাত্মা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ- এমন সব ব্যাক্তি হিসেবে নিজেকে কল্পনা করা পাগলরা নিজেদের মধ্যে তর্কে লিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দেয়। কেউবা নিজেদের লাইলি-মজনু কল্পনা করে তাদের প্রেমময় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাতিক্রম টোবাটেক সিং। ৪৬ এর দাঙ্গায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। হঠাৎ খবর আসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পাগল বিনিময়ের, যা বিরূপ প্রভাব ফেলে সব পাগলের উপর। অন্যদিকে গারদের প্রহরী সৈন্য দ্বারা ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে টিয়া নামের এক পাগল। এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে চালান দেয়ার জন্যে গারদের অসহায় ডাক্তারকে তার অস্তিত্তের হুমকি দেয়া হয়। এরই মাঝে প্রস্তুতি চলে পাগল বিনিময়ের। দেশপ্রেমী টোবাটেক সিং কে বিনিময় করার সময় সীমান্ত সেনাদের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃতদেহ পরে থাকে দুই দেশের সীমান্ত মধ্যবর্তী স্থান “নো ম্যান্স ল্যান্ড” এ, যা ঠিকানাবিহীন মানুষের ঠিকানা, যেখানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা রাষ্ট্র মানুষকে স্পর্শ করেনা।
নাটকটি সম্পর্কে পুনঃনির্দেশক মোঃ মোরসালিন পলাশ বলেন, নাটক নির্দেশনা দেয়া একটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ বলেই জেনে এবং মেনে এসেছি। কিন্তু সক্রিয় নাট্যকর্মী হিসেবে নিরদেশনার প্রতি দুর্বলতাও একান্ত কম ছিল না। নির্দেশনার এ কাজটুকু যতটুকু সম্ভব সুচারুরূপে সম্পন্ন করার কোন কসরত ছাড়িনি বলেই আমার বিশ্বাস। স্বল্প জ্ঞান ও অল্প অভিজ্ঞতা কে পুঁজি করে প্রথম নির্দেশনার কাজটি করেছি বলে এতে ভুল থাকা বেশ স্বাভাবিক। যারা এ কাজে আমাকে প্রতক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেছেন তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। পর্দার সামনের ও আড়ালের সবার সহযোগিতা না পেলে কখনই নাটকটির প্রদর্শনী সম্ভব ছিল না।